বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 



আমার দেশের প্রতি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণমুখী সমবায় আন্দোলনকে অত্যমত্ম গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা সমবায়ের পথ- সমাজতন্ত্রের পথ, গণতন্ত্রের পথ। সমবায়ের মাধ্যমে গরীব কৃষকরা যৌথভাবে উৎপাদন- যন্ত্রের মালিকানা লাভ করবে। অন্যদিকে অধিকতর উৎপাদন বৃদ্ধি ও সম্পদের সুসম বণ্টন ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষুদ্র চাষী গণতান্ত্রিক অংশ ও অধিকার পাবে। জোতদার ধনী চাষীর শোষণ থেকে তারা মুক্তি লাভ করবে সমবায়ের সংহত শক্তির দ্বারা। একই ভাবে কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, জেলে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যদি একজোট হয়ে পুঁজি এবং অন্যান্য উৎপাদনের মাধ্যমে একত্র করতে পারেন তবে আর মধ্যবর্তী ধনিক ব্যবসায়ী-শিল্পপতির গোষ্ঠী তাদের শ্রমের ফসলকে লুট করে খেতে পারবে না। সমবায়ের মাধ্যমে গ্রাম-বাংলায় গড়ে উঠবে ক্ষুদ্র শিল্প যার মালিক হবে সাধারণ কৃষক, শ্রমিক এবং ভূমিহীন নির্যাতিত দুঃখী মানুষ। সমাজতন্ত্র স্থাপনের জন্য আমরা ইতিমধ্যেই সমসত্ম বড় শিল্প, ব্যাংক, পাটকল, চিনিকল, সূতাকল ইত্যাদি জাতীয়করণ করেছি। জমির সর্বোচ্চ মালিকানার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছি। আজ সমবায় পদ্ধতিতে গ্রামে গ্রামে, থানায়, বন্দরে গড়ে তুলতে হবে মেহনতী মানুষের যৌথ মালিকানা। কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসলের বিনিময়ে পাবে ন্যায্যমূল্য, শ্রমিকরা পাবে শ্রমের ফল- ভোগের ন্যায্য অধিকার।

কিন্তু এই লক্ষ্যে যদি আমাদের পৌঁছাতে হয় তবে অতীতের ঘুনে ধরা সমবায় ব্যবস্থাকে আমুল পরিবর্তন করে এক সত্যিকারের গণমুখী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অতীতের সমবায় ছিল শোষক- গোষ্ঠীর ক্রীড়নক। তাই সেখানে ছিল কোটারী স্বার্থের ব্যাপক ভূমিকা।

আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশে ঐ ধরণের ভূঁয়া সমবায় কোন মতেই সহ্য করা হবে না। আমাদের সমবায় আন্দোলন হবে সাধারণ মানুষের যৌথ আন্দোলন। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী  জনতার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান।

আপনারা জানেন সমবায় সংস্থাগুলিকে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তোলার জন্যে আমি ঘোষণা করেছি যে সংস্থার পরিচালনা- দায়িত্ব ন্যসত্ম থাকবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উপর, কোন আমলা বা মনোনীত ব্যক্তির উপরে নয়। আমার সমবায়ী ভাইয়েরা এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপকে অভিনন্দিত করেছেন। এই গণতন্ত্রীকরণের পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই তাদের দায়িত্ব। তাদের দেখতে হবে যে সমবায় সংস্থাগুলি যেন সত্যিকারের জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে উঠে। জেলে সমিতি, তাঁতী সমিতি, গ্রামীণ কৃষক সমিতি যেন সত্যিকারের জেলে, তাঁতী, কৃষকের সংস্থা হয়, মধ্যবর্তী ব্যবসায়ী বা ধনী কৃষক যেন আবার এই সমিতিগুলিকে দখল করে অতীত দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি না করে। যদি আবার সেই কোটারী স্বার্থ সমবায়ের পবিত্রতা নষ্ট করে, তবে নিশ্চিতভাবে জেনে রাখুন যে আমরা সমসত্ম পুরাতন ব্যবস্থা বাতিল করে দেবো। আমার প্রিয় কৃষক মজুর জেলে তাঁতী ভাইদের সাহায্যে এমন একটি নুতন ও সুসম ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যা শোষণ ও প্রতিক্রিয়াশীল কোটারী স্বার্থকে চিরদিনের জন্য নস্যাৎ করে দেবে।

বাংলাদেশ সমবায় সংস্থার বিভিন্ন সত্মরে বহুবিধ অব্যবস্থা, অযোগ্যতা ও দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে জমে জমে দুর্নীতির পাহাড় তৈরী হয়েছে। সমবায় সংস্থা অবাধ বিকাশ ও সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে দুর্নীতির জগদ্দল পাথরকে সরাতেই হবে। জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে পরিচালিত প্রশাসন ব্যবস্থাকে দুর্নীতির নাগপাশ থেকে মুক্ত করে জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।

বাংলাদেশ আমার স্বপ্ন, ধ্যান, ধারণা ও আরাধনার ধন। আর সে সোনার বাংলা ঘুমিয়ে আছে চির অবহেলিত গ্রামের আনাচে কানাচে, চির উপেক্ষিত পলস্নীর কন্দরে কন্দরে, বিসত্মীর্ণ জলাভূমির আশে পাশে আর সুবিশাল অরণ্যের গভীরে। ভাইয়েরা আমার- আসুন সমবায়ের যাদুস্পর্শে সুপ্ত গ্রাম বাংলাকে জাগিয়ে তুলি। নব- সৃষ্টির উন্মাদনায় আর জীবনের জয়গানে তাকে মুখরিত করি।

আমাদের সংঘবদ্ধ জনশক্তির সমবেত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলতে হবে ‘সোনার বাংলা’। এ দায়িত্ব সমগ্র জাতির, প্রত্যেক সাধারণ মানুষের এবং তাঁদের প্রতিনিধিদের। তবেই আমার স্বপ্ন সার্থক হবে, সার্থক হবে শহীদের আত্মত্যাগ, সার্থক হবে মাতার অশ্রম্ন। রাজনৈতিক স্বাধীনতা তার সত্যিকারের অর্থ খুঁজে পাবে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাদে, আপামর জনসাধারণের ভাগ্যোন্নয়নে। তবেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে রূপায়িত হবে সমাজতান্ত্রিক নীতির এবং সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাবো সমবায়ের মাধ্যমে। জয় বাংলাদেশের সমবায় আন্দোলন। জয় বাংলা।

 

 [ ৩ জুন ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত সমবায় সম্মেলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত ভাষণের উল্লেখযোগ্য অংশ।] 

Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

এক নজরে

ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ)        

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১৯৭৫-১৯৭৬ অর্থবছরে কুমিল্লা, বগুড়া ও ময়মনসিংহ জেলার ৩টি সদর থানায় পরীক্ষামূলকভাবে “ক্ষুদ্র কৃষক ও ভূমিহীন শ্রমিক উন্নয়ন প্রকল্প” কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের অগ্রগতি সন্তোষজনক পরিলক্ষিত হওয়ায় জুলাই ১৯৮৮ হতে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার ১১টি উপজেলায় প্রকল্পটির কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হয়। জুন ১৯৯১ সনে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের বাস্তবায়ন সমাপ্ত হয়।

 

১৯৯১-৯৬ইং মেয়াদে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়ন হয়। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নকালে বরিশাল জেলার ৪টি ও ভোলা জেলার ৩টি উপজেলাকে সম্পৃক্ত করণের মাধ্যমে ২১টি উপজেলায় কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। ১৯৯৬-৯৯ মেয়াদে প্রকল্পটির তৃতীয় পর্যায় বাস্তবায়ন হয়। তৃতীয় পর্যায় বাস্তবায়নকালে চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায় কার্যক্রম মূল্যায়নপূর্বক ১৯৯৯-২০০৪ মেয়াদে প্রকল্পটি একটি “প্রদর্শনীমূলক” কর্মসূচী হিসাবে বাস্তবায়ন সমাপ্ত হয়। প্রদর্শনীমূলক সময়ে চাঁদপুর জেলার ৩টি, ময়মনসিংহ জেলার ৩টি, ভোলা জেলার ১টি ও বরিশাল জেলার ১টিসহ মোট ০৮টি উপজেলাকে প্রকল্পভূত্তু করার মাধ্যমে ০৮টি জেলার ৩০টি উপজেলায় কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। প্রদর্শনীমূলক কার্যক্রম বিভিন্ন মূল্যায়নে আশাব্যঞ্জক প্রতিফলিত হওয়ায় প্রকল্পটিকে সারা দেশে ব্যপ্তি করার লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়। প্রকল্পটিকে মেয়াদ সমাপনান্তে বিদ্যমান সম্পদ ও দায়দেনাসহ (with assets and liabilities) ১৯৯৪ সালের কোম্পানী আইনের ২৮ ধারার বিধানমতে যৌথ মূলধন কোম্পানী ও ফার্ম সমূহের পরিদপ্তর হতে নিবন্ধন গ্রহণের মাধ্যমে “ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (Small Farmers Development Foundation)” নামে একটি লিমিটেড কোম্পানীতে রূপান্তর করা হয় ।